আমি কে ? ( Who am I ? ) - #অজিত মাহাত

 যে কোন গুরুর কাছে দীক্ষা নেওয়ার জন্য গেলেই প্রথমে জিজ্ঞেস করবে ; তুমি কে ? তুমি তো বলবে আমি অভয় মাহাত , পন্ডাধর  মাহাত এর ছেলে  ; গ্রাম মিরগা | তখন গুরুজি  বলবেন ওটা তো তোমার নাম | নামটা তো তুমি নও | যেমন ধরো তোমার ঐ  হাতের মোবাইল কার প্রশ্ন করা হলে , তুমি তো বলবে এটা আমার মোবাইল | তাহলে কি ধরে নেওয়া যাবে , যে ওই মোবাইলটিই তুমি | আমার মোবাইল মানে এটাই বোঝায় যে , মোবাইলটা আমি নই ; মোবাইলের মালিক আমি | ঠিক সেইরকম তুমি অভয়  মানে , অভয় নামটির মালিক তুমি | তুমি অভয় নও | অনেক সময় ভুলবশত আমরা দড়িকে সাপ ভেবে ভয় পেয়ে যাই | সেটা আমাদের ভ্ৰম | তাই বলে ভ্ৰম বসত তুমি যদি দড়ি কে সাপ বলে দাও , তাহলে কিন্তু দড়িটা সাপে পরিণত হবে না | সেটা দড়ি আছে দড়িই   থাকবে | তোমাকে এখন যদি কেউ অজিত বলে ডাকে, তুমি অজিত এ পরিণত হবে না |তুমি কিন্তু অভয়ই থাকবে | তাহলে নিজেকে জানতে গেলে, তোমার আদি স্বত্তা কে বা মালিককে   জানতে হবে | তুমি যদি বল এই শরীরটাই আমি | তাহলে প্রশ্ন হবে তোমার ওই শরীরটা কার | তুমি তো বলবে আমার | আর যেটা তোমার সেটা তো তুমি নও | আমি আগেই বলেছি মোবাইলটা তোমার মানে , সেটার মালিক তুমি |তাহলে শরীরটা তোমার মানে শরীরের মালিক তুমি | এবার তুমি বলতে পারো তাহলে আমার মনটাই আমি |
মন কি ? মন হল পঞ্চইন্দ্রিয়ের সমষ্টি - চোখ, কান, জিভ, নাক ও ত্বক দ্বারা গৃহীত জ্ঞান | যেমন ধর তুমি জন্মের পর কিছুই জানতে না | বা জন্মের সময় মানুষের মস্তিষ্ক থাকে সাদা কাগজের মতো ; এটাতো অবশ্যই শুনেছো | তুমি কিভাবে জানলে কে তোমার মা, বাবা | চোখ দিয়ে দেখেছো আর কান দিয়ে শুনেছো যে, এটা তোমার মা, এটা তোমার বাবা | কোন জিনিসের কেমন স্বাদ এটা জেনেছ জিভ দিয়ে | নাক দিয়ে বুঝেছ কোন জিনিসের কেমন গন্ধ | ত্বক দিয়ে শীত, উষ্ণতা,  ব্যথা ইত্যাদি উপলব্ধি করেছো | আর তোমার অক্ষর পরিচয় কিভাবে হয়েছে  ? কিভাবে পড়িয়েছিল তোমার প্রথম শিক্ষক ? এটা ´অ` এটা ´আ `| চোখ দিয়ে চিনেছ আর কান দিয়ে  তার শব্দটা শুনেছো | আর এইভাবে পড়াশোনা করে অনেক জ্ঞান অর্জন করেছ | এই পাঁচ ইন্দ্রের দ্বারা গৃহীত সমস্ত জ্ঞানের সমষ্টি হল মন | আর এই মনটি কার প্রশ্ন করা হলে , তুমি তো অবশ্যই বলবে, আমার মন | বলে না সবাই আজ আমার মন খারাপ , আমার মন খুব খুশি | মনটা যদি তোমার হয় তাহলে মনটা তো তুমি নও | কারন আমি আগেই বলেছি যেটা তোমার সেটা কিন্তু তুমি নও| সেটার মালিক তুমি | অনুরূপভাবে তোমার বুদ্ধি মানে, বুদ্ধির মালিক তুমি | তোমার বিবেক মানে,  তার মালিক তুমি| যা কিছু তোমার আছে,  সেটা তুমি নও ; সেটার মালিক তুমি| তাহলে তুমি কি ভাবছো,  তোমার কি কোন অস্তিত্বই নেই | একটু ভাবলেই উত্তর পেয়ে যাবে| না ভাবলে নিজেকে জানা সম্ভব নয়|
মনে মনে ভাবো যে তোমার আজকেই জন্ম হল ; এইমাত্র |তোমার নামকরণ হয়নি | তোমার কোন জ্ঞানই হয়নি | এখন তোমার উপলব্ধিটা কেমন হবে ? এখন তো তুমি বলবে; এখন তো আমি তাহলে শুধুই আমি | ভালো করে ভেবে দেখো, তুমি নিজেকে ব্রহ্মাণ্ড ভাববে | নিজেকে তুচ্ছ মানব ভাববে না , নিজেকে সীমাহীন ভাববে | মনে হবে তুমিই সবকিছু | যখন তোমাকে তোমার মা অভয় বলে ডাকবে , আর সেটা যখন তোমার বোধগম্য হবে ; তখনি তোমার মনে প্রথম ভ্ৰম সৃষ্টি হবে যে , আমি তো আমি নই ; আমি অভয়| আসলে তুমি কিন্তু অভয় নও ; সেটা তোমার নাম | আর এই ভ্ৰমটাকেই কে সত্য মনে করে , তুমি একটি নকল স্বত্তা বা মালিকের সৃষ্টি করবে | আর সেটাকে পরবর্তীকালে তুমি নিজেকে আমি ভাববে | আর ঐ রকম ভাবেই তোমার ভ্রান্তি জ্ঞানের ভান্ডার বাড়তে থাকবে; যে - আমি তো আমি নই , আমি পন্ডাধর  মাহাত এর ছেলে অভয় |আমি তো আমি নই , আমার মীরগাতে বাড়ি |আমি তো আমি নই , আমি ভারতবর্ষের নাগরিক  ; ইত্যাদি, ইত্যাদি |
 যখন এই ভ্রান্তি জ্ঞানের ঊর্ধ্বে উঠে , নিজের আদি স্বত্তাকে জানতে পারবে , তখন বুঝবে তুমি কে |ধর্ম কথার অর্থই হলো ধর + মম = ধর্ম |অর্থাৎ নিজেকে ধরা বা জানাই হল ধর্ম্ম ||

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মহাভারতের বিরাট পর্ব্বে পঞ্চ-পাণ্ডবের ও দ্রৌপদীর অজ্ঞাত বাসের সময় তাঁদের নাম কি ছিল ? - #অজিত মাহাত

ব্রহ্মা , বিষ্ণু, মহাদেব - এনাদের মধ্যে কে সবথেকে বড় ? জেনে নিন ... - #অজিত মাহাত

শ্রী কৃষ্ণের মৃত্যুর কারণ কি শুধুই গান্ধারীর অভিশাপ না কি তাঁর কর্মফল ! - #অজিত মাহাত