স্বভাব কি ? What is Nature ? - #অজিত মাহাত

What is Nature - Spiritual Ajit
স্বভাব কথার অর্থ হল নিজস্ব ভাব বা নিজস্ব প্রকৃতি । মানুষের স্বভাব দুই ভাবে গঠিত হয় । ক্রিয়মান কর্মের দ্বারা এবং বর্ণ বা জাতি ও কুল ভেদে মানুষের স্বভাব ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে । ক্রিয়মান কর্মের ফলে দুই রকম সংস্কার সৃষ্টি হয় । শুদ্ধ বা পবিত্র সংস্কার এবং অশুদ্ধ বা অপবিত্র সংস্কার । শাস্ত্রবিহিত কর্ম করার ফলে যে সংস্কার হয় , সেগুলি শুদ্ধ ও পবিত্র হয় । আবার শাস্ত্র , নীতি , লোক মর্যাদার বিরুদ্ধ কর্ম করলে যে সংস্কার হয় , তা হয় অশুদ্ধ ও অপবিত্র । এই শুদ্ধ ও অশুদ্ধ সংস্কার নিয়েই মানুষের স্বভাব বা প্রকৃতি গঠিত হয়ে থাকে ।

মানুষের সংস্কারে অশুদ্ধ অংশের বিনাশের এর ফলে স্বভাব শুদ্ধ , নির্মল ও পবিত্র হয়ে যায় । কিন্তু যেসব পূর্বকৃত কর্মের দ্বারা বা বর্ণ - জাতি ও কুল ভেদে সংস্কার গঠিত হয় , সেই কর্মগুলির ভিন্নতার জন্য জীবন্মুক্ত পুরুষদের স্বভাবেও নানা ভেদ থেকে যায় । এই স্বভাবের বিভিন্নতার কারণেই তাদের দ্বারা বিভিন্ন রকমের কর্ম হতে দেখা যায় , কিন্তু সেই সব কর্ম দোষযুক্ত হয় না ।

যেমন বাঘ ঘন বনে সন্তুষ্ট থাকে , সিংহ গুহায় আশ্রয় নেয় , হংস চাই পদ্মপুকুর , শকুন শ্মশানস্থল , সাধু সদাচারী সৎ মানুষের মধ্যেই থাকতে চান , নীচ প্রকৃতির লোক চায় নীচ জনকে । যার যেমন প্রকৃতি স্বভাব থেকে জন্মায় , সেই প্রকৃতি কেউ ছাড়তে চায় না ।

ঠিক তেমনিই ব্রাহ্মণ , ক্ষত্রিয়াদি বর্ণের যে স্বভাব , তাঁরা সেইমতোই কর্ম করে থাকে । বর্ণ বা জাতি ভেদে যে স্বভাব গঠিত হয় তা কেউ বদলাতে পারে না । অতএব সেই স্বভাব দোষী নয় , তা নির্দোষ ।

What is Nature - Spiritual Ajit
যেমন ব্রাহ্মণ - ক্ষত্রিয়াদি বর্ণের যে স্বভাব তা কেউ বদলাতে পারে না বা শাস্ত্রও তাকে বদলাতে বলে না । কিন্তু সেই স্বভাবের যে অশুদ্ধ অংশ ( রাগ , হিংসা , ঘৃণা ) আছে , সেটিকে দুর করার সামর্থ্য ভগবান মানুষকে দিয়েছেন । যে দোষের ফলে মানুষের স্বভাব অশুদ্ধ হয় সেই দোষ ঘুঁচিয়ে ফেলা শাস্ত্রবিহিত ।

বর্ণ , আশ্রম , সম্প্রদায় , সাধন - প্রক্রিয়া ইত্যাদি অনুসারে তাদের কর্মের মধ্যে পরস্পর ভেদ থেকেই যায় । যেমন , কোন ব্রাহ্মণ এর তত্ত্ববোধ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও সে নিজের খাওয়া - দাওয়াতে শুদ্ধতা , পবিত্রতা বজায় রেখেই চলবে এবং একমাত্র স্বপাকেই ভোজন করবে । কারণ তার স্বভাবেই এই পবিত্রতা আছে । কিন্তু কোন সাধারণ বর্ণের মানুষের যদি তত্ত্বজ্ঞান হয়ে যায় তা হলেও সে খাওয়া-দাওয়া তে অত পবিত্রতা বজায় রাখতে যাবে না , অন্যের উচ্ছিষ্টও খেয়ে নেবে । তার কারণ , তার স্বভাবই বা প্রকৃতিই সেইভাবে গড়ে উঠেছে । কিন্তু তার এই স্বভাব তার জন্য দোষী বলে বিবেচিত হবে না ।

জীবের অসতের সঙ্গে সম্বন্ধ স্থাপনের প্রবণতা বা স্বভাব অনাদিকাল থেকেই হয়ে আসছে । যার দরুন সে জন্ম - মরণের এই চক্রে পড়ে বারবার উচ্চ - নীচ যোনীতে পরিভ্রমণ  করছে । এই স্বভাবকে মানুষ শুদ্ধ করতে পারে । স্বভাবের মধ্যে কামনা , মমতা , একাত্মতা বা তদাত্ম্য ঘুঁচে গেলে যে স্বভাব থাকে , সে স্বভাব আর দোষের কারণ হয় না । সেইজন্য সেই স্বভাব তাকে ঘোঁচাতে হবে না বা ঘোঁচানোর কোনও প্রয়োজনও নেই ।

যখন মানুষ অহংকারের আশ্রয় ছেড়ে সর্বথা ভগবানের শরন বা আশ্রয় নেয় তখন তার স্বভাব শুদ্ধ হয়ে যায় ।

What is Nature - Spiritual Ajit

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মহাভারতের বিরাট পর্ব্বে পঞ্চ-পাণ্ডবের ও দ্রৌপদীর অজ্ঞাত বাসের সময় তাঁদের নাম কি ছিল ? - #অজিত মাহাত

ব্রহ্মা , বিষ্ণু, মহাদেব - এনাদের মধ্যে কে সবথেকে বড় ? জেনে নিন ... - #অজিত মাহাত

শ্রী কৃষ্ণের মৃত্যুর কারণ কি শুধুই গান্ধারীর অভিশাপ না কি তাঁর কর্মফল ! - #অজিত মাহাত